হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহ খাতামি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লেফটেন্যান্ট জেনারেল কাসেম সোলাইমানি, পারমাণবিক বিজ্ঞানী মোহাম্মদ তাহেরাঞ্জি এবং আরও বহু বিশিষ্ট ইরানি ব্যক্তিত্বের হত্যার জন্য দায়ী। তাঁর ভাষায়, “যুক্তরাষ্ট্রই আইএসআইএল (ISIL)-এর জন্ম ও বিস্তারে প্রধান ভূমিকা রেখেছে।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের “ইরানের জনগণের প্রতি বন্ধুত্বের দাবি”কে “প্রকাশ্য মিথ্যা” বলে আখ্যা দেন। আয়াতুল্লাহ খাতামি বলেন, “ওয়াশিংটন ইরানে একসময় একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন ও নির্যাতনমূলক শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত গুপ্তচর নেটওয়ার্ক পরিচালনা করেছিল।”
*সরকারি প্রতিক্রিয়া ও গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ*
ইরান প্রেস নিউজ এজেন্সি (Iran Press) জানিয়েছে, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “জেসিপিওএ এখন অতীতের বিষয়। তবে ইরান ন্যায্য ও পারস্পরিক সম্মানজনক ভিত্তিতে নতুন কোনো কাঠামো গঠনে আগ্রহী।”
তেহরান টাইমস (Tehran Times) অনুসারে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেন, “আমরা কখনোই আলোচনার বিরোধী নই, কিন্তু শর্ত একটাই—সমান মর্যাদা ও পারস্পরিক আস্থার ভিত্তি। যে পক্ষ অন্যের অধিকার অস্বীকার করে, তার সঙ্গে আলোচনা অর্থহীন।”
মেহর নিউজ (Mehr News Agency) তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আয়াতুল্লাহ খাতামির বক্তব্য মূলত ইরানের জনগণকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে ছিল—যাতে কেউ যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রস্তাবকে সহজে গ্রহণ না করে।
ইরনা (IRNA), ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা, জানিয়েছে যে, ইরান এখন “নতুন কূটনৈতিক পর্বে” প্রবেশ করছে। সংস্থাটির ভাষায়, “জেসিপিওএ-এর আনুষ্ঠানিক অবসান কোনো পরাজয় নয়, বরং এটি ইরানের স্বাধীন নীতির ঘোষণাপত্র।”
*আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক সাড়া*
রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বিষয়টিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, “ইরান যদি আন্তরিকভাবে পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে আগ্রহী হয়, আমরা কূটনৈতিক পথ খোলা রাখব।”
তবে দ্য গার্ডিয়ান মন্তব্য করেছে, “ইরানের এই ঘোষণার মাধ্যমে ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি কার্যত সমাপ্ত হলো, যা একসময় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির আশা জাগিয়েছিল।”
ইরান ইন্টারন্যাশনাল জানায়, রাশিয়া ও চীন ইরানের অবস্থানকে সমর্থন করেছে এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ‘স্ন্যাপব্যাক’ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান এখন স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে, তারা চাপের মুখে নয়, বরং সমমর্যাদার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক চায়।
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহদি ফাল্লাহি বলেন, “ইরান এখন এমন এক অবস্থানে আছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আস্থা পুনরুদ্ধার না হলে কোনো চুক্তি টেকসই হবে না।”
এদিকে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণ সংস্থা কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস (Carnegie Endowment) তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলেছে, “জেসিপিওএ শেষ হওয়া মানে নতুন এক পরমাণু কূটনৈতিক ভারসাম্যের সূচনা।”
আপনার কমেন্ট